একটা জীবনের গল্প। কিছু মানুষের গল্প। পৃথিবীতে অনেক মানুষ থাকে যারা হারাতে হারাতে সব হারিয়ে ফেলে এমনই একটা হারানোর গল্প।
পরিবারের বড় মেয়ে অনু। এনজিওতে কাজ করে নিজের পরিবার চালায় মেয়েটা। তার ছোটভাইয়ের নাম অয়ন। প্রথম দিক থেকেই অয়নকে ঘিরে তাদের সবার কিছু আচরণ আলাদা হয়ে যায়। পরে জানা যায় অয়নের হাতে বেশিদিন সময় নেই। ও একটা অসুখে আক্রান্ত। কিন্তু তাও অনু শক্ত থাকে। মা ভেঙে পড়ে কাঁদতে থাকলেও অনু শক্ত থাকে।
হুট করে একটা পৃষ্ঠায় এসে অয়নের মৃত্যুর হয়ে যায়। বেশ বড় একটা ধাক্কা অনুভব করবে পাঠক এই লাইনে এসে।
অয়নের পরে মা হারিয়ে যায় অনুর। আস্তে আস্তে দু বোনের একটা বোন যে মায়ের বাসাতেই থাকতো তার স্বামীর ব্যবসা ভালো চলতে শুরু হবার কারণে সেও সিদ্ধান্ত নেয় তারা অন্য কোথাও চলে যাবে। কিন্তু সেই স্বামীর ব্যবসার সাফল্যের পিছনেও রয়েছে একটা অদ্ভুত রহস্য। প্রথমত, অনু বা কেউ সেটাকে মাথায় না নিলেও পরে যখন অনু সেই অদ্ভুত কারণ জানতে পারে তখন একেবারে প্রায় চুপসে গিয়েছিলো।
একলা একটা মেয়েকে বাড়িওয়ালা তাদের বাসায় রাখবেনা। তাই চলে যেতে হবে অনুকে। একটা সময় দেয়া হলো। যদিও তখন অনুর কাছে পুলিশের আগমন হয় আর কেস শেষ না হয়া পর্যন্ত অনুকে এই বাড়িতেই রাখতে তাদের বাড়িওয়ালাকে বলে পুলিশ কর্মকর্তা। তবুও একটা সময় ছাড়তেই হতো। ছাড়তেই হলো। এরপরে এক হোটেলে উঠতে হয় তাকে।
এর আগে তার চাকরীটা চলে যায়। চলে যায় না ঠিক, সে ছেড়ে দেয়। ছেড়ে দেয়ার কারণ ছিলো অফিসে তাকে সবসময় সাপোর্ট দিয়ে যাওয়া একটা মানুষ। রাতারাতি যার নিজের চরিত্র সম্পর্কে ধারণা পায় অনু। আর পরবর্তীতে জানা যায়, সে শুধু অনু না আরো অনেক মেয়ের জীবনের জন্যই একটা দেয়াল হয়ে দাঁড়িয়েছে।
নতুন চাকরী জোটাতে গিয়ে যাবেনা বলেও যেতে হয় তার বান্ধবীর স্বামীর কাছে। আর সে বিষয়ে জানার পরে বান্ধবী আর তার মধ্যেও সমস্যার সৃষ্টি হয়। যা সে মেনে না নিয়ে সেই চাকরীটাও ছেড়ে দেয়।
পরবর্তীতে, তার বোনের স্বামীর ব্যবসা আর অনুর পুরাতন কিছু শত্রুর আগমন তার জীবনটাকে আবার থমকিয়ে দেয়। তার বোনের স্বামী শামীম, তার বউকে পাঠিয়ে দেয় দূরে কোথাও আর যোগাযোগ করতে বারণ করে কারো সঙ্গেই। তখন তার স্ত্রীর গর্বে তাদের দ্বিতীয় সন্তান ছিলো। শামীম কথা দিয়েছিলো সন্তান প্রসবের আগেই সে ফিরবে। কিন্তু শামীম ফেরেনি। কেন ফেরেনি সেটা গল্পে জানা যাবে।
অনু বোনকে ফোনে পায়না। চিন্তিত হয়ে যায় তার জীবনে আগমন ঘটে একটা নতুন অধ্যায়ের। যে অধ্যায়টা কিনা তাকে সুখে রাখছিলো দিন দিন। হাসান! হাসান কে? হাসান কেন তার জন্য সুখের অধ্যায় ছিলো সেটা গল্পে বেশ স্পষ্টত জানা যাবে। কিন্তু সেই সুখের অধ্যায়ের মাঝেও তার বোনের জন্য তার চিন্তা বাড়ে আর সে থমকে যায়। তবুও সাধারণ জীবনে ফিরে আসার যথেষ্ট চেষ্টা সে করে।
শামীমকে ফোন দিয়ে পায়না। পুলিশ কর্মকর্তাও দেশের অন্য গুরুত্বপূর্ণ ইস্যু নিয়ে ব্যস্ত হয়ে পরে। তাই সে জানায় শামীমের ব্যাপারে সে জানেনা। আর হতে পারে শামীম মারা গেছে বা সেফ প্লেসে চলে গেছে। কিন্তু অনু জানেনা শামীম কোথায়।
হাসান নামক সুখকর অধ্যায়টাও শেষ হয়ে যায়। সেই পুরানো শত্রুতার জন্য। নরকীয় জীবন থেকে সুখের জীবনে ফিরে এসেও আবার সেটাকে হারিয়ে ফেলতে হয় অনুর। এভাবে হয়ে যায় সে নিঃসঙ্গ। নিঃসঙ্গ একটা নক্ষত্র। আসলে আমরা পৃথিবী থেকে দেখি তারাগুলো একেকটা পাশাপাশি। আসলেই কি তাই? সত্যিটা হলো তাদের একেকটা তারার মাঝে অনেক দুরত্ব। অনেক বেশি দূরত্ব। তাই যদি পৃথিবী থেকে তাদের একত্রে দেখাও যায় তবুও তারা নিঃসঙ্গ!
লেখক তারা যারা একটা মানুষের আবেগ কন্ট্রোল করে, মস্তিষ্ক কন্ট্রোল করে। পুরো বইয়ের ক্ষেত্রে সাদাত ভাই সেই কাজটা করেছে। আমার মনে হয়েছে আমার আবেগ তার বইয়ের লাইনে ছিলো। অয়নের মৃত্যুর সেই লাইনে এসে বুক ফেটে কান্না বেরিয়ে আসবে। কিংবা পুরো গল্পটা পড়ে ইচ্ছে করবে নিঃসঙ্গ হয়ে একা খানিকক্ষন চিৎকার করে কাঁদতে। হুটহাট বুকের ভেতর মোছর দিয়ে উঠবে। হুটহাট কাঁদতে ইচ্ছে হবে। আবার হুটহাট করেই ইচ্ছে করবে রোমান্টিক হয়ে দু লাইন কবিতা গাইতে। বইটাতে সব ছিল। সব মিলিয়ে কম্পিলিট প্যাকেজ।
আমি বই রেটিং-এ বিশ্বাসী না। একটা লেখক একটা বই অনেক কষ্ট আর চিন্তার পরে লিখেন। তাই তাদের কষ্টের দাম মাত্র ৫ পয়েন্টের ভিতর দিতে চাইনা। লেখকদের সেই চিন্তাধারণা বা কষ্টের দাম পয়েন্ট দিয়ে নয়, বরং বই ভাল খারাপ না ভেবে বই কিনে তাকে উৎসাহিত করা আর সুধরে দেয়ার মাঝেই বিদ্যমান। তবে সব ধরনের স্বাদ পেতে চাইলে এই গল্পটা পড়বেন অবশ্যই! আর রেটিং চাইলে বলবোঃ বেষ্ট একটা বই। এর বেশি কিছু না।
No comments:
Post a Comment