টাইম ট্রাভেল কি? আদৌ সম্ভব টাইম মেশিনে করে টাইম ট্রাভেল করা?
টাইম ট্রাভেল, নামটি শুনলেই চোখের সামনে কাল্পনিক জগতের একটি গোল টাইম মেশিন ভেসে ওঠে। যেখানে প্রবেশ করলেই মানুষ চলে যায় ভবিষ্যতে। দেখতে পায় অত্যাধুনিক দালানকোঠা, দ্রুতগতির যানবাহন যা কল্পনাকেও হার মানায়। আমাদের সকলেরই ইচ্ছে হয় যেন ভবিষ্যত থেকে কিছুক্ষণ ঘুরে আসি, দেখে আসি নিজেদের কীরকম অবস্থা। যদি স্বপ্নের মতো সবকিছুই পেয়ে যাই তাহলে তো ভালোই। আর যদি দেখি বিপরীত কিছু, তবে দ্রুত বর্তমানে ফিরে এসে যেন সকল ভুল শুধরে নেই। এরকমটা যদি সত্যিই হতো!
টাইম ট্রাভেল বা সময় ভ্রমণ। এটি আসলে সময়ের অক্ষ বরাবর ভ্রমণ। আমরা সকলেই তিনটি মাত্রা সম্পর্কে অবগত, দৈর্ঘ্য, প্রস্থ এবং উচ্চতা। এই তিনটি মাত্রা বরাবর স্থান পরিবর্তন সম্ভব। তবে ন্যূনতম চতুর্মাত্রিক একটি ধারণা হচ্ছে সময়ের ধারণা। আজ পর্যন্ত এই চতুর্থ মাত্রা দিয়ে স্থান পরিবর্তন সম্ভব হয়নি। এই সময়ের অক্ষ বরাবর স্থান পরিবর্তনকে কালমাত্রিক সরণ বলা হয়। এক সময় থেকে আরেক সময়ে পরিভ্রমণকেও আমরা সময় ভ্রমণ বলে থাকি। এটি হতে পারে অতীতে ভ্রমণ, হতে পারে ভবিষ্যতে ভ্রমণ। আধুনিক পদার্থবিজ্ঞান কিন্তু টাইম ট্রাভেল বা সময় ভ্রমণ নিয়ে একদমই বসে নেই।
পদার্থবিদ্যায় টাইম ট্রাভেল এবং সম্ভাবনা
তাত্ত্বিক পদার্থবিদ্যা বলে যে একটা কথা আছে, সেই অনুযায়ী টাইম ট্রাভেল সম্ভব। কিন্তু এর মাধ্যমে শুধু অতীতে যাওয়া সম্ভব নয়। কেন সম্ভব নয় তা পরে ব্যাখ্যা করছি। কিন্তু হ্যাঁ, ভবিষ্যত ভ্রমণ সম্ভব। তবে সিনেমা বা সায়েন্স ফিকশনের নানা কমিকসের মতো গোল টাইম মেশিন বানিয়ে তা সম্ভব কিনা সে কথা জানা নেই। কিছুদিন আগে বিবিসিতে একটি খবর এসেছিল যে University of Connecticut-এর পদার্থবিদ্যার প্রফেসর রন ম্যালেট একটি ডিভাইস বানিয়েছেন যার আদলে ভবিষ্যতে টাইম মেশিন বানানো যাবে। বেশ আশার আলো দেখতে পাচ্ছি হয়তো! তবে তা কতদূর সম্ভব বা আদৌ সম্ভব কিনা, কিংবা সম্ভব হলেও আমাদের জীবদ্দশায় হবে কিনা সেই ব্যাপারটি পুরোপুরিই অনিশ্চিত।
যাই হোক পদার্থবিদ্যায় ফিরে যাই।
অস্ট্রিয়ার প্রখ্যাত গণিতবিদ কুর্ট গডেল গণিতের মাধ্যমেই দেখিয়েছেন যে আমাদের এই ব্রহ্মাণ্ডে কিছু Closed Timelike Curve থাকা সম্ভব যা নির্দেশ করে সময়ভ্রমণও সম্ভব, তবে বিশেষ কিছু শর্তে। অ্যালবার্ট আইনস্টাইনের বিশেষ আপেক্ষিকতার তত্ত্ব অনুসারেও সময় ভ্রমণ সম্ভব। কীভাবে?
আপেক্ষিকতা অনুসারে কোনো বস্তু যখন আলোর গতিতে চলবে তখন তা হয়ে যাবে ভরশূন্য। আর যদি আলোর গতিতে চলে যায় তবে সময় স্থির হবে, মানে টাইম ট্রাভেল হবে। তার মানে আইনস্টাইনের আপেক্ষিকতা অনুযায়ী তাত্ত্বিকভাবে সময় ভ্রমণ সম্ভব।
ধরুন, আপনাকে আলোর গতিতে ছুটে চলতে পারে এমন কোনো একটি মহাকাশযানে উঠিয়ে দেয়া হল এবং আপনি ভ্রমণে বেরিয়ে পড়লেন মহাজগতের এপার থেকে ওপার। কিন্তু পৃথিবীতে এসে দেখবেন অনেক বছর সময় কেটে গেছে যেখানে আপনার কাছে মনে হবে মাত্র অল্প কিছু সময়। এভাবেই আইনস্টাইনের থিওরীতে সময় ভ্রমণের ফর্মুলা লুকিয়ে আছে।
এখন আসি ব্ল্যাকহোলের ব্যাপারে। ব্ল্যাকহোলের মাধ্যমে সময় ভ্রমণ কীভাবে সম্ভব? ব্ল্যাকহোল কী? ব্ল্যাকহোল বা কৃষ্ণগহ্বর হলো তারার খুব দুর্দশাপূর্ণ অবস্থা। তারাগুলো একেবারে চুপসে গিয়ে ভর একদম একটি বিন্দুতে এসে পৌঁছায়, যার ফলে স্থান কালের মাত্রা অসীম হয়ে যায়।
সেখানে আলো প্রবেশ করলেও আর বের হয়ে আসতে পারে না। আবার আইনস্টাইনের Theory Of General Relativity অনুসারে ভর বেশি যতো, সময় ধীর হবে ততো।আপনি যদি কোনো মহাকাশযান নিয়ে ব্ল্যাকহোলের আশপাশে ভ্রমণ করতে থাকেন আর অন্য একটি মহাকাশযান যদি পৃথিবীর চারদিকে ভ্রমণ করতে থাকে তবে ব্ল্যাকহোল ভ্রমণকারীর বয়স, পৃথিবীর চারপাশে ঘোরা ব্যক্তির বয়সের অর্ধেক হবে। প্রশ্ন করতে পারেন আমি কেন ব্ল্যাকহোলের চারপাশে ঘোরার কথা বললাম। এর উত্তর হলো, ব্ল্যাকহোলে ঢুকলে আপনি আর বের হতে পারবেন না। সেখানে মহাকর্ষ বল অত্যধিক। আলোও বের হয়ে আসতে পারে না, যা আগেই বলেছি। ব্ল্যাকহোলের গ্রাভিটেশনাল ফিল্ডের শেষ সীমানাকে বলা হয় ঘটনা দিগন্ত, যা অতিক্রম করে ফেললে আপনাকে আর কোনোদিনও পাওয়া যাবে না। তাহলে ব্ল্যাকহোলের চারপাশে ঘুরপাক খাবেন আর সময় স্থির হতে থাকবে, পৃথিবীতে তার দ্বিগুণের মত সময় অতিবাহিত হয়ে যাবে।
এবার আসি ওয়ার্মহোলের ব্যাপারে। বলা হয়ে থাকে এটিই সবচেয়ে সম্ভাবনাময় উপায়। আমাদের একটি বিষয় জানা থাকা প্রয়োজন যে স্পেস বা মহাশূন্যের পথ কখনোই সমতল নয়। অর্থাৎ এটি বাঁকা পথে চলে। তাই আলো যখন মহাশূন্যের ভেতর দিয়ে ভ্রমণ করে, তখন এই বাঁকানো স্পেসের ভেতর দিয়ে একটি বাঁকানো পথে চলতে বাধ্য হয়। কিন্তু এই বাঁকা পথের পাশাপাশি আরও একটি সংক্ষিপ্ত রাস্তাও আছে। এই সংক্ষিপ্ত পথই হচ্ছে ওয়ার্মহোল।
ওয়ার্মহোলকে অনেক সময় আইনস্টাইন-রজেন ব্রিজ নামেও ডাকা হয়ে থাকে। ধরুন, আমাদের সৌরজগৎ থেকে আলফা সেন্টরাইতে যাবেন, আলোর গতিতে গেলে লাগবে ৪.৩ বছর। আবার আপনি ভরযুক্ত, তাই আপনার পক্ষে আলোর গতিতে ভ্রমণ সম্ভব নয়। কিন্তু ওয়ার্মহোলের মাধ্যমে সংক্ষিপ্ত পথ তৈরি করে আপনি সহজেই আলফা সেন্টরাইতে প্রবেশ করতে পারবেন, আবার নিজের সৌরজগতেও ফিরে আসতে পারবেন। তার মানে আপনি ভবিষ্যতেও যেতে পারবেন আবার অতীতেও ফিরে আসতে পারবেন। তবে অতীতে ফিরে আসা কতটুকু সম্ভব তা নিয়ে পরে আলোচনা করছি।
ওয়ার্মহোল প্রসঙ্গে স্টিফেন হকিং বলেন, ‘আসলে ব্ল্যাকহোলে পতিত কোনো বস্তু একেবারেই হারিয়ে যায় না, এটি কণিকারূপে ব্ল্যাকহোল থেকে নির্গত হয়। হকিং-বিকিরণ তত্ত্বানুযায়ী এই কণিকা যে পথে নির্গত হয়, সে পথটিই হলো ওয়ার্মহোল। অর্থাৎ ব্ল্যাকহোলে পড়লেই যে আপনি একদম হারিয়ে যাবেন, তা স্টিফেন হকিং মানতে নারাজ। তবে ওয়ার্মহোলের অস্তিত্ত্ব প্রমাণ হলে আপনি কণিকারুপে সেই ওয়ার্মহোল থেকে বের হয়ে আসবেন।
আবার আরেকটু লক্ষ্য করুন, বিশাল ভরের কারণে ব্ল্যাকহোলের চারপাশের স্থান-কালের একটি অসীম বক্রতা সৃষ্টি হয়। লক্ষকোটি আলোকবর্ষ দূরবর্তী স্থান-কালগুলো বক্রতার কারণে একটি ক্ষুদ্র বিন্দুতে পরিণত হয়। এখন আমরা আমাদের অবস্থান থেকে কোনো বস্তুকে যদি ব্ল্যাকহোলে নিক্ষেপ করি, তাহলে এর কণিকাগুলো ওয়ার্মহোল দিয়ে নির্গত হয়ে খুব অল্প সময়ের ব্যবধানে লক্ষকোটি আলোকবর্ষ দূরের কোনো জগতে পৌঁছে যাবে। অর্থাৎ স্বাভাবিক সময়ে যে স্থান-কালে পৌঁছতে ওই বস্তুর কোটি কোটি বছর লাগত তাকে আমরা ওয়ার্মহোল ব্যবহারে খুব কম সময়ে এ দূরত্বটুকু অতিক্রম করিয়ে অন্য জগতে প্রবেশ করাতে পারবো। তাহলে ওয়ার্মহোল সম্পর্কে আমরা প্রাথমিক ধারণা পেয়েছি?
অনেকেই ভেবে থাকেন যে ওয়ার্মহোল হচ্ছে ব্ল্যাকহোল এবং হোয়াইটহোলের একটি মিলিত পথ। কিন্তু ওয়ার্মহোল আজও প্রমাণিত নয়, কারণ কোন ওয়ার্মহোল এখনো খুঁজে পাওয়া যায়নি। ঠিক আবার হোয়াইটহোলও প্রমাণিত নয় কারণ আজও এটি হাইপোথিসিসরূপেই আমাদের আশা দেখিয়ে আসছে। তবে ওয়ার্মহোলের ব্যাপারে একটি আশার ব্যাপার হচ্ছে বিজ্ঞানী স্টিফেন হকিং, কিপ থর্নের মতে ওয়ার্মহোল বাস্তবে পাওয়া সম্ভব, আর এটা দিয়েই টাইম ট্রাভেল সবচেয়ে সম্ভাবনাময় হবে। দেখা যাচ্ছে আইনস্টাইন, হকিং, থর্ন সবাই একসাথে ওয়ার্মহোলের ব্যাপারে সহমত প্রকাশ করেছেন, অপেক্ষা শুধু কবে বাস্তবে সশরীরে দেখা দেবে এই ওয়ার্মহোল!
অপরদিকে ফ্রাঙ্ক টিপলার তাত্ত্বিকভাবে প্রমাণ করেন যে, নিজের অক্ষের চারদিকে দ্রুত ঘূর্ণায়মান এক অসীম দৈর্ঘ্যের চোঙ আসলে একটি টাইম মেশিন। তাহলে অবশ্যই এর দ্বারা সময় ভ্রমণ সম্ভব। টিপলার অনুমান করেছিলেন যে, যথেষ্ট বেগে ঘূর্ণায়মান সসীম দৈর্ঘ্যের চোঙের সাহায্যেও সময় ভ্রমণের ধারণাটি বাস্তবায়ন করা যেতে পারে। পরবর্তী সময়ে হকিং প্রমাণ করেন যে, কখনোই কোন সসীম দৈর্ঘ্য, প্রস্থ এবং উচ্চতা বিশিষ্ট টাইম মেশিন নির্মাণ করা সম্ভব নয়। তার মানে টাইম মেশিন দিয়ে টাইম ট্রাভেল হকিং-এর মতে একদম অসম্ভব।
কোয়ান্টাম তত্ত্ব অনুসারে টাইম ট্রাভেল
স্টিফেন হকিং এই তত্ত্বের মাধ্যমেই বুঝতে পেরেছিলেন যে, টাইম ট্রাভেল প্রকৃতিবিরোধী। আইনস্টাইনের সাধারণ আপেক্ষিক তত্ত্বানু্যায়ী যে বিশেষ ক্ষেত্রসমূহ দ্বারা টাইম ট্রাভেল সম্ভব বলে মনে করা হচ্ছে, তা কোয়ান্টাম তত্ত্ব দ্বারা স্বীকৃত নয়। বেশ জটিল হয়ে গেল বিষয়টা। একবার বলা হচ্ছে সম্ভব, আরেকবার বলা হচ্ছে সম্ভব না। কারণ আবারও বলছি টাইম ট্রাভেল শুধু তাত্ত্বিকভাবেই সম্ভব, বাস্তবিক অর্থে আলোর গতিতে না পৌঁছাতে পারলে সম্ভব না। সেক্ষেত্রে এমন একটি টাইম মেশিন নির্মাণ করা প্রয়োজন যেখানে আলোর গতির কাছাকাছি গতি অর্জন করা সম্ভব।
যাই হোক মহাকর্ষের সামগ্রিক কোয়ান্টাম তত্ত্ব আজো আমাদের অজানা, তাই সময় ভ্রমণের সম্ভাবনাহীনতার ব্যাখ্যা বা অনুমান, কোনটিই আপাতত সর্বসম্মতিক্রমে গৃহীত নয়। তাই বহু বিজ্ঞানীই বিশ্বাস করেন, টাইম ট্রাভেল বাস্তবে সম্ভব। এ প্রসঙ্গে পদার্থবিদ রোনাল্ড ম্যাল একটি বলয় লেসারের সাহায্যে ঘূর্ণায়মান ব্ল্যাকহোলের অনুরূপ পরিস্থিতি সৃষ্টির মাধ্যমে সময় ভ্রমণকে বাস্তবায়িত করার নিরলস প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন।
বিভিন্ন সময়ে বহু বিজ্ঞানী(লিজুং ওয়াং, গুন্টার নিমস, অ্যালফন্স স্তালহফেন) দাবী করে আসছেন যে তাঁরা আলোর চেয়ে বেশি গতিবেগে সংকেত প্রেরণের মাধ্যমে টাইম ট্রাভেলের ধারণাটি বাস্তবায়ন করেছেন, যদিও বাস্তবসম্মতভাবে পরীক্ষালব্ধ ফলাফল এখনো সবটাইম ট্রাভেল বা সময় ভ্রমণের ক্ষেত্রে আপনি ভবিষ্যতে ভ্রমণ করতে পারবেন যা আপাতত কাগজে কলমের ক্ষেত্রেই সম্ভব বলে ধরে নেয়া যাচ্ছে, ওয়ার্মহোলের দেখা মিললে বিজ্ঞানীরা অবশ্যই আর খাতা কলমের হিসেব নিয়ে পড়ে থাকবে না, শুরু করে দেবে সময় ভ্রমণ। তো যাই হোক গত পর্বে আমি বলেছিলাম টাইম ট্রাভেল করে অতীতে যাওয়া কেন সম্ভব নয় তা পরের পর্বে(এই পর্বে) ব্যাখ্যা করবো। অতীতে টাইম ট্রাভেলের ক্ষেত্রে কিছু প্যারাডক্স এসে বেশ ঝামেলা সৃষ্টি করছে। কথা হচ্ছে প্যারাডক্স আবার কী? চলুন প্যারাডক্স নিয়ে আলোচনা শুরু করা যাক।
Paradox শব্দটির অর্থ দাঁড়ায় ‘কূটাভাস’ বা ‘আপাতদৃষ্টিতে স্ববিরোধী’। এটি কোনো কিছুর সম্ভাবনাকে বাতিল করে দেয়। পারস্পরিক সম্পর্কযুক্ত অথচ বিপরীতধর্মী কোনো ব্যাপারকে বুঝাতে এই প্যারাডক্স ব্যবহার করা হয়।
“A paradox is a statement that apparently contradicts itself and yet might be true (or wrong at the same time)
পদার্থবিদ্যায় সময় পরিভ্রমণ কূটাভাস দু’টি বড় ভাগে বিভক্তঃ একটি হল Consistancy Paradox বা ‘কন্সিস্টেন্সি (মিলে যাওয়া) প্যারাডক্স’, যা ব্যাখ্যা করা হয় গ্র্যান্ডফাদার প্যারাডক্সের উদাহরণ দ্বারা। আর অপরটি হল ক্যাজুয়াল প্যারাডক্স, অর্থাৎ রীতিবিবর্জিত বা খাপছাড়া চক্র বা প্যাঁচ। আবার একে ক্যাজুয়াল লুপও বলে। মানে ঘুরেফিরে আগের অবস্থানে এসে পরিবর্তন দেখতে পাওয়া। এটিই প্যাঁচ বা লুপের খেলা। সময় ভ্রমণের ক্ষেত্রে প্যারাডক্সগুলো কী আগে তা জানার চেষ্টা করি।
ক্যাজুয়াল লুপ বা রীতিবিবর্জিত চক্র
যখন ভবিষ্যতের কোন ঘটনার দ্বারা অতীত পরিবর্তিত হয়ে যায়, আবার ঐ অতীতের কোনো ঘটনার পরিবর্তনের কারণে ভবিষ্যতের ঘটনাও স্বভাবত পরিবর্তিত হয়ে যায় (অর্থাৎ সেই প্রথমে উল্লেখিত ভবিষ্যতটি অন্য ভবিষ্যৎ হয়ে যায়), এই ঘটনাকে বলা হয় ক্যাজুয়াল লুপ।
আবার সেক্ষেত্রে দুটি ঘটনা-ই তখন স্থান-সময়ে সহাবস্থান করে কিন্তু তাদের অতীত নির্দিষ্টভাবে খুঁজে পাওয়া যায় না। ক্যাজুয়াল লুপটি কোন ঘটনা, ব্যক্তি বা বস্তু, বা তথ্যের কারণে ঘটে থাকতে পারে। গল্প-উপন্যাসের ক্ষেত্রে ক্যাজুয়াল লুপ শব্দটির পরিবর্তে boot-strap paradox, predestination paradox বা ontological paradox ইত্যাদি ব্যবহার করা হয়।
হিটলার প্যারাডক্স
আসল জায়গায় এসেছেন, এই প্যারাডক্সটি বেশ মজার। ধরুন কোনো কারণে অতীতে সময় পরিভ্রমণ সম্ভব হলো। আপনাকে একটি টাইম মেশিন বানিয়ে দিলাম, আপনি এই টাইম মেশিন ব্যবহার করে অতীতে চলে গেলেন। আপনি টাইম মেশিনে করে ১৮৮৯ সালে চলে গেলেন। ১৮৮৯ সালের ২০শে এপ্রিল হিটলারের জন্ম। উনি জন্মানোর সাথে সাথেই আপনি তাঁকে গুলি করে হত্যা করলেন।
বেচারার তাহলে আর কোনো ইতিহাস থাকবে? যেমন তিনি ইহুদী নিধন করে সারাবিশ্বের খলনায়ক হিসেবে বেশ পরিচিতি লাভ করেছেন। যার জন্য আমরা আজ তাঁকে চিনি। যদি তিনি তৎকালীন অস্ট্রিয়ার কোনো সাধারণ নাগরিক হিসেবেই জীবনধারণ করতেন এবং প্রকৃতিগত কারণে একসময় মারা যেতেন তবে অবশ্যই তাঁকে আজ আমরা স্মরণ করতাম না, তাই না? আর যেহেতু এই প্যারাডক্স অনুসারে আপনি তাঁকে অতীতে জন্মের পরপরই মেরে ফেলেছেন সুতরাং হিটলার নামক এক শিশু হত্যার দায়ে অস্ট্রিয়াতে আপনার নামে হত্যা মামলা দায়ের করা হবে। এর বেশি কিছু তো হচ্ছে না? তার মানে যুগের পর যুগ তাকে কেউই মনে রাখবে না। আপনিও না আমিও না। তাহলে আপনি কেন অতীতে ফিরে গিয়ে
হিটলারকে হত্যা করবেন?
তাহলে ব্যাপারটা দাঁড়ালো এই যে, হিটলারকে আপনি শিশু অবস্থায় মারতে পারবেন না, যদি পারতেন তাহলে সে ইতিহাসের পাতায় থাকতো না, আর ইতিহাসের পাতায় না থাকলে ‘হিটলার’ শব্দটির সঙ্গেও আপনার কোনো পরিচয় থাকতো না। সুতরাং হিটলার প্যারাডক্স অনুসারে সময় ভ্রমণে করে অতীতে যাওয়া অসম্ভব।
বুটস্ট্রেপ প্যারাডক্স বা Bootstrap Paradox এর ক্ষেত্রে এখানে Bootstrap শব্দটির অর্থ হলো- ‘’pull oneself over a fence by one’s bootstraps’’। বুঝিয়ে বলছি।
এই প্যারডক্সটি নির্দেশ করা হয় এমন কোনো এক আবিষ্কারকে যা অতীতে নিয়ে গেলে ‘কে আবিষ্কার করেছে অথবা কোথা থেকে আসলো বা এর উৎপত্তি কোথায়’ ইত্যাদি প্রশ্নের মুখে পড়ে যাবে। মাথা ঘুরপাক খেলো? সহজ উদাহরণে বুঝিয়ে দিচ্ছি।আগের প্যারাডক্সগুলোর মতো এইবারও ধরেন আপনি টাইম ট্রাভেল করে অতীতে যাবেন। তবে এই প্যারাডক্সের ক্ষেত্রে আপনাকে কিছু জিনিস হাতে করে নিয়ে যেতে হবে। টাইম মেশিনের একপ্রান্তে ঢুকে অন্য প্রান্ত দিয়ে বের হয়ে চলে গেলেন অতীতে, ধরুন ৫ বছর বয়সী কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের কাছে। সেখানে গিয়ে আপনি গীতাঞ্জলি কাব্যগ্রন্থ রবি ঠাকুরের হাতে ধরিয়ে দিলেন। তিনি রীতিমত অবাক! ‘এ আবার কী?’ আপনি বললেন যে ‘এটি আপনারই লেখা’।
লক্ষ করুন, আপনি কবিগুরুকে আগেই তার কাব্যগ্রন্থ দিয়ে দিয়েছেন, যা কবি নিজে লেখেননি। তাহলে এটি কে লিখলো? ধরে নিলাম আপনার দেয়া গীতাঞ্জলি কাব্যগ্রন্থ দেখে হুবহু অবিকল একটি কাব্যগ্রন্থ রবি ঠাকুর প্রকাশ করলেন যা আপনার এনে দেয়া গীতাঞ্জলির মতোই, প্রতিটি শব্দে শব্দে মিল। কথা হচ্ছে আপনার দেয়া জ্ঞান ফটোকপি করে রবি ঠাকুর সেই কাব্যগ্রন্থটি রচনা করেন, তাহলে আপনি অতীতে আসার সময় যে কাব্যগ্রন্থটি এনেছিলেন সেটি কার লেখা? ঐ কাব্যগ্রন্থটির উৎপত্তি কোথায়?
উত্তর- অসমাধানযোগ্য। তার মানে অস্তিত্বহীন বা মালিকানাহীন কোনো একটি বস্তু বা জ্ঞান বলে কিছু থাকতে পারে না। তার মানে এই প্যারাডক্স অনুসারে অতীতে ভ্রমন কি সম্ভব? অবশ্যই না।
ফার্মির প্যারাডক্স
টাইম ট্রাভেল যদি সম্ভব হয় তাহলে টাইম ট্রাভেলার বা সময় পরিভ্রমণকারীরা কোথায়? এখনো আসেনি কেন?” – সময় পরিভ্রমণ সংক্রান্ত ফার্মির প্যারাডক্সটি এভাবে বলা যেতে পারে। এটিই ফার্মির প্যারাডক্স নামে পরিচিত।
তবে প্যারাডক্সটির উত্তর এরকম পাওয়া যায় যে- “সময় পরিভ্রমণ সম্ভব নয়” বা “ভবিষতের কোন ভ্রমণকারী সংঘাত সৃষ্টি হয় এমন কোন ঘটনা/স্থানে উপস্থিত হতে পারবে না” বা “তারা ছদ্মবেশ ধারণ করে ঘুরে বেড়ায় যাতে কেউ তাদের চিনতে/ সনাক্ত করতে না পারে” ইত্যাদি।
তবে ছদ্মবেশে ঘুরতে পারে এবং তারা আমাদের আশেপাশেই আছে, এমন সম্ভাবনার কথা কার্ল স্যাগান নিজেও বলেছিলেন।
তার মানে ফার্মির প্যারাডক্সের উত্তর এমনভাবেই দেয়া যায় যে আপনি অতীতে যদি যান তাহলে আপনার উপস্থিতি এমন হবে যে আপনি সেখানে থেকেও কিছু করতে পারবেন না বা আপনাকে সেখানকার কেউ খুঁজে পাবে না।
গ্র্যান্ডফাদার প্যারাডক্স
দাদাজানের দোষ কী এখানে? দোষ কিছুই না। একটু দাদাকে দিয়ে থিওরিটিক্যাল এক্সপেরিমেন্ট করবো আর কি! সেটা আবার কেমন?
দাদা বা পিতামহ নিয়ে কূটাভাস বা গ্র্যান্ডফাদার প্যারাডক্স বিষয়টিকে টাইম ট্রাভেলের সব প্যারাডক্সের রাজা বলতে পারি। এই প্যারাডক্সের জন্য পুরো টাইম ট্রাভেলের সম্ভাবনাই নাকচ হয়ে যায়।
ধরুন কোনো ব্যক্তি টাইম ট্রাভেল করে অতীতে যেতে চায়। ঠিক আছে, টাইম মেশিনে ঢুকে চলে গেল অতীতে। একদম অতীতে গিয়ে তার দাদাকে জন্মের পরপরই হত্যা করলো। তাহলে তার দাদা শিশু অবস্থায় মারা গেল। যেহেতু দাদা শিশু অবস্থায় মারা গেল, সেহেতু ঐ ব্যক্তির বাবার জন্ম হওয়া অসম্ভব, কারণ দাদা কোনো সন্তান জন্মদান করে যাননি। আর বাবার জন্ম না হলে সেই ব্যক্তিটিই বা আসলো কোথা থেকে? ব্যস! এই একটি প্রশ্নই যথেষ্ট টাইম ট্রাভেল করে অতীতে যাওয়া আটকাতে।
তার মানে আপনি অতীতে গিয়ে যদি এমন সব কর্মকান্ড করে বসেন যা বর্তমানের পরিচয়কে প্রশ্নবিদ্ধ করে, তাহলে সেক্ষেত্রে কিভাবে অতীত ভ্রমণ করবেন? টাইম ট্রাভেলের প্যারাডক্সের বিষয়ে প্রচলিত ২টি থিওরি আছে। ধরে নিতে পারেন উপরের যত প্যারাডক্স পরে আমাদের মন খারাপ হয়ে গিয়েছিল যে টাইম ট্রাভেল হয়তো সম্ভবই না, সেসকল প্যারাডক্সসমূহের সম্ভাব্য সমাধান। প্যারাডক্সের সমাধানে যাওয়া যাক তবে।
থিওরী দুটি হচ্ছে-
১. নভিকভের আত্মরক্ষার থিওরী এবং ২. প্যারালাল ইউনিভার্স থিওরী।
১. নভিকভের আত্মরক্ষার থিওরি (Novikov’s self-consistency theory)
রাশিয়ান পদার্থবিদ ইগর ডিমিয়েত্রিভিচ নভিকভের আবিষ্কার এই থিওরি। এই থিওরি অনুযায়ী টাইম ট্রাভেল করে অতীতে ফিরে গেলেও কেউ এমন কোনো কাজের সাথে সংযুক্ত হতে পারবে না (মানে জগতের নিয়ম অনুযায়ী জগত সেটা হতে দেবে না) যেটা তার প্রকৃত বর্তমানকে প্রভাবিত করবে। ধরা যাক কেউ একজন ব্যক্তি যদি অতীতে গিয়ে তার ছোটবেলার শিশু অবস্থায় নিজেকে হত্যা করার চেষ্টা করে, সে সেটা পারবে না।
কারণ নিয়ম অনুযায়ী সে তার শিশু অবস্থাকে হত্যা করলে তার অস্তিত্বই অসম্ভব হয়ে যায়।হয়তো সে ছোটবেলায় যেখানে থাকতো সেখানে গিয়ে শৈশবের নিজেকে খোঁজার চেষ্টা করে তাহলে দেখবে যে সেখানে তারা থাকে না। অন্য কোনো পরিবার সেখানে বসবাস করছে। জগতই তাদের অবস্থান পরিবর্তন করে দিয়েছে। এই থিওরি অনুযায়ী কেউ যতই চেষ্টা করুক না কেনো, এমন কোনো কাজ করতে পারবে না যা প্রকৃত বর্তমানকে পরিবর্তন করবে।
তার মানে এই থিওরি অনুসারে দাদার প্যারাডক্স, বুটস্ট্র্যাপ প্যারাডক্স ইত্যাদির একটি সম্ভাবনাময় সমাধান তৈরি সম্ভব।
ম্যাসাচুসেটাস ইউনিভার্সিটি অব টেকনোলজি এর সেথ লয়েড (Seth Lloyed) ও তার গবেষক দল নভিকভের থিওরির একটু বিস্তৃত বর্ণনা দিয়ে বলেছেন, “প্যারাডক্স থেকে রক্ষা পেতে সম্ভাবনা সবসময়ই প্রয়োজন অনুযায়ী পরিবর্তন যাবে। তার মানে আপনি অতীতে ভ্রমণ করতে পারবেন তবে দাদাকে হত্যা করার কোনো শক্তি আপনাকে দেয়া হবে না।
আপনার বর্তমান অস্তিত্বের বিন্দুমাত্র যেন ক্ষয়ে না যায় সেজন্য অতীতে গেলে আপনাকে সীমাবদ্ধতার মাঝে কাজ করতে হবে। আপনি হিটলারকে মেরে ফেলতে চান শিশু অবস্থায়? দেখা যাবে আপনি তাঁকে খুঁজেই পাচ্ছেন না। তার মানে বর্তমানে যা রয়েছে, তার সবই অপরিবর্তিত থাকবে। অতীতে গিয়ে নিজের ভুল শুধরে নিয়ে নতুন জীবন শুরু করারও সুযোগ নেই। তাহলে অতীতে গিয়ে কী লাভ? সেখানে দর্শকের ভূমিকায় থাকা ছাড়া আমি নিজেও কোনো লাভ খুঁজে পাচ্ছি না।
২. প্যারালাল ইউনিভার্স থিওরী
কোয়ান্টাম মেকানিক্স অনুযায়ী, আমাদের মহাবিশ্বই একমাত্র মহাবিশ্ব নয়। এরকম আর মহাবিশ্ব থাকতে পারে। আর এই একাধিক মহাবিশ্বের ধারণাকেই বলা হয় বহুবিশ্ব(Multiverse)। খুব সাধারনভাবে বললে, প্যারালাল ইউনিভার্স বা সমান্তরাল বিশ্ব হচ্ছে এমন একটি তত্ত্ব যেখানে বলা হয়েছে মহাবিশ্বে একাধিক পৃথিবী রয়েছে এবং তারা একটি অন্যটির প্রতিরূপ। প্যারালাল ইউনিভার্স আমাদের ব্রহ্মাণ্ডের মতো আরও একটি বা একাধিক ব্রহ্মাণ্ড যা ঠিক আমাদেরই মতো। সেখানকার প্রকৃতি, ভূমণ্ডল এমনকি প্রাণিজগৎও একেবারে আমাদেরই মতো। হুবহু আমাদেরই মতো দেখতে সবকিছু। একেবারে যেন আমাদের যমজ বিশ্ব।
এ ধারণার একটি কারণ রয়েছে। ১৯২৯ সালে আমেরিকান জ্যোতির্বিদ এডউইন হাবল বুঝতে পারেন যে, গ্যালাক্সিগুলো একে অপরের থেকে দূরে সরে যাচ্ছে। আর যে গ্যালাক্সি যতদূরে অবস্থিত সেটা তত দ্রুত দূরে সরে যাচ্ছে। এ থেকে ধারণা করা হয় যে, নিশ্চয় অতীতে এই গ্যালাক্সিগুলো একসাথে খুব কাছাকাছি ছিল। এখান থেকেই বিগ ব্যাং ধারণার উৎপত্তি। এই ধারণার পক্ষে অনেক প্রমাণ পাওয়া গেছে। যাহোক, ধারণা করা হয় যে, সেই সময় মহাবিশ্ব অনেক উত্তপ্ত ছিল আর সমান সংখ্যক কণা – প্রতিকণা বিদ্যমান ছিল। কিন্তু, আমাদের পরিচিত মহাবিশ্ব শুধু মাত্র কণা দিয়েই গঠিত, প্রতিকণা দিয়ে নয়। তাহলে স্বাভাবিকভাবেই প্রশ্ন আসে যে, প্রতিকণাগুলো গেল কোথায়? অনেক বিজ্ঞানী মনে করেন, ঐ সময় সমান সংখ্যক কণা- প্রতিকণা থাকলেও তাদের মধ্যে সংঘর্ষের সময় প্রতি এক বিলিয়নে একটি কণা কোনোভাবে বেঁচে যায়( বলে রাখা দরকার যে, কণা ও প্রতিকণার সংঘর্ষে তারা উভয় ধ্বংস হয়ে যায়, কেবল অবশিষ্ট থাকে শক্তি) । কিন্তু, এখানে একটা সমস্যা আছে। সমান সংখ্যক কণা প্রতিকণাই যদি থাকে, তবে প্রতি এক বিলিয়নে একটি কণারও বাঁচার কথা নয়। তখন তাদের সংঘর্ষে খালি অবশিষ্ট থাকবে শক্তি, ফলে মহাবিশ্ব গঠিত হবার কথা নয়। এজন্য অনেক বিজ্ঞানী অন্য একটা বিকল্প মতামত দেন যে, প্রতিকণাগুলো সময়ের পেছনে গিয়ে একটা সমান্তরাল মহাবিশ্ব তৈরি করেছে। সেখানে আপনার আমার প্রতিরুপ আছে। যদি তাদের দেখা হয়, আর তারা যদি হ্যান্ডসেক করে তবে তারা দুই জনই ধ্বংস হয়ে যাবেন। এখন এই যে সময়ের পিছনে যাবার কথা বললাম, সে বিষয়ে বিজ্ঞানীরা এখনো নিশ্চিত নন বা বলা যায় এ বিষয়ে তারা বেশি কিছু জানেন না। তাই এটা এখনো অনুমান (hypothesis) হয়ে রয়েছে।
স্টিফেন হকিং ২০০৯ সালের ২৮শে জুন ক্যামব্রিজের কাছে কোনো এক স্থানে একটি নৈশভোজ পার্টির আয়োজন করেন। তবে তিনি মানুষকে
দাওয়াত দেন পার্টির শেষে, সময় তখন ২৯জুন হয়ে গেছে। তিনি পার্টির শেষে ২৮জুনের পার্টিতে অংশ নেয়ার জন্য ‘ইনভাইটেশন লেটার’ বানিয়ে রাখেন।
- ক্ষুদ্র বিবরঃ
ক্ষুদ্র বিবর দিয়ে টাইম ট্রাভেল কি সম্ভব? ব্ল্যাক হোলে লাফ দিলে তার মৃত্যু অনিবার্য । স্টিফেন হকিং এর এই ব্যাপারে আপত্তি ছিলো, তিনি মনে করতেন তথ্য সম্পূর্ণ হারিয়ে যায় না সেটা হোয়াইট হোল দিয়ে বের হয় । হোয়াইট হোল হলো ব্ল্যাক হোলের উল্টো । ব্ল্যাক হোলের ভিতর দিয়ে যা প্রবেশ করে সেটা হোয়াইট হোল দিয়ে বের হয়ে যায় । হোয়াইট হোল আর ব্ল্যাক হোলের মধ্যে সংযোগ রাস্তা হলো ক্ষুদ্র বিবর । ক্ষুদ্র বিবর ব্ল্যাক হোল এবং হোয়াইট হোলের মধ্যে যেমন সংযোগ তৈরি করে ঠিক তেমনি ভাবে এক মহাবিশ্ব থেকে অন্য মহাবিশ্বের বা শিশু মহাবিশ্বের মধ্যে সংযোগ রাস্তা হলো ক্ষুদ্র বিবর । ক্ষুদ্র বিবর দিয়ে অনেক সহজে টাইম ট্রাভেল করা যায় । এটা দিয়ে ভবিষ্যত ও অতীতে যাওয়া যায় ।
আকাশে যে তারা দেখেন বর্তমান সেটা কিন্তু বর্তমানের তারা নয় । এটা হলো অতীতের তারা । আমাদের আকাশে যে তারা দেখা যায় এগুলো সব অতীতের তারা । আমাদের সবচেয়ে নিকটতম তারা হলো প্রক্সিমা সেন্টাউরি 4.2 আলোকবর্ষ । অর্থাৎ সবচেয়ে নিকটতম তারা থেকে আলো আসতে সময় লাগে 4.2 বছর, এই তারা 4.2 বছর অতীতের তারা । আকাশের সব তারাই অতীতের । হয়তো এমন কোনো তারা আছে যার জ্বালানি ফুরিয়ে গিয়েছে, সেখানে তারা নেই । কিন্তু আমরা মনে করি তারাটি এখনো জ্বলছে ! মনে করুন আপনি প্রক্সিমা সেন্টাউরিতে বসবাস করেন । আপনার তারার জ্বালানি শেষ হবে ঠিক সেই মুহুর্তের আগে আপনি ক্ষুদ্র বিবর দিয়ে পৃথিবীতে চলে আসলেন । ক্ষুদ্র বিবর দিয়ে দেখেছিলেন আপনার তারার মৃত্যু হয়ে গিয়েছে কিন্তু আপনি পৃথিবীতে আসার পর আপনি দেখবেন তারাটি এখনো জ্বলজ্বল করে জ্বলছে । আপনি 4.2 বছর তারাটি জ্বলতে দেখবেন , আপনি পৃথিবীতে বসে 4.2 বছর নিজের অতীত দেখতে পারবেন । ক্ষুদ্র বিবর থিওরিক্যাল , এখনো প্রমান হয়নি ,ভবিষতে প্রমাণ হতেও পারে । তবে এতো খুশি হবার কিছু নেই । কারণ ক্ষুদ্র বিবর লজ্জাবতী ফুলের পাতার মতো ।
স্পর্শ করা মাত্র লজ্জাবতী পাতা চুপসে যায় ঠিক তেমনি ক্ষুদ্র বিবর খুবই ভঙ্গুর প্রকৃতির । আপনি ক্ষুদ্র বিবরে ঢুকলে শব্দ পেলে ভেঙে যাবে । কিন্তু এমন কোনো নভোযান নেই সেটার শব্দ হবে না ।
আপনি 4.2 বছর নিজের অতীত দেখলেন । তাহলে কি অতীতে যাওয়া সম্ভব ? তখন এর উত্তরে চলে আসে গ্র্যান্ডফাদার প্যারাডক্স সহ নানান রকমের প্যারাডক্স , আর সে প্যারাডক্সের থেকে দেখা যায় যে টাইম ট্র্যাভেল করার পর আপনি আপনার নিজের অস্বিত্ব নষ্ট করে ফেলেন ।
প্যারাডক্স গুলো ভয়ানক এখন থেকে পড়ুন । এই সব প্যারাডক্স অনুযায়ী নিঃসন্দেহ বলা যেতে পারে অতীতে টাইম ট্র্যাভেল অসম্ভব ।কী অদ্ভুত! হ্যাঁ এটা অদ্ভুত হলেও তিনি বেশ আশা নিয়েই এই পৃথিবী ত্যাগ করেছেন। তাঁর বিশ্বাস ছিল ভবিষ্যতের কেউ না কেউ এই
ইনভাইটেশন লেটারটি নিয়ে অতীত ভ্রমণ করে পার্টিতে অংশ নেবেন। তবে এই সম্ভাবনা কিন্তু উড়িয়ে দেয়া যায় না!
No comments:
Post a Comment